আজকের পোস্টের মুল বিষয় হলো ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে। এছাড়াও আমরা ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি, ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা, ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা, ফাউমি মুরগি চেনার উপায়, ফাউমি মুরগির দাম কত, ফাউমি মুরগির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
তাহলে চলুন জেনে নেই ফাউমি মুরগি কিভাবে পালন করতে হয় তা সম্পর্কে।
ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে আমরা একটু পরে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই ফাউমি মুরগি কিভাবে পালন করতে হয় তা সম্পর্কে। আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে চাকরির অনেক সমস্যা থাকার কারনে এখন আমরা সবাই নিজে নিজে সাবলম্বী হতে চাই।
যার কারনে আমরা বিভিন্ন মুরগির খামার, হাসের খামার, গরুর খামার দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করি। কিন্তু কিভাবে এই খামারগুলো শুন্য থেকে ভালো একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারনা থাকে না। যার কারনে আমরা এই ধরনের ব্যবসা শুরু করলেও সফল হতে পারি না।
তাই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এবার আসুন ফাউমি মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে। আমাদের দেশ বর্তমানে গরমকালীন একটি দেশ। এখন ১২ মাসের মধ্যে প্রায় ৭-৮ মাস গরম থাকে এবং বাকি মাসগুলোতে ঠান্ডা এবং বৃষ্টি হয়ে থাকে।
ফাউমি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে গরম অথবা শীত কোনোটাই তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। ফাউমি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে খাবার এবং বাসস্থান ঠিক রাখতে হবে। তাহলেই এই মুরগি পালনে সফল হওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ সেরা ১৫ টি ঘুমের ঔষধের নাম, কাজ এবং দাম
প্রতিদিন নিয়ম করে শাকসবজি খাওয়ানো, মুরগিকে স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া, সময়মত ঔষধ দেওয়া ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে পারলে তবেই ফাউমি মুরগি পালন করা সম্ভব। মুরগির কখন কি অসুখ হচ্ছে বা অন্য কি সমস্যা হচ্ছে সাথে সাথে তা নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করতে হবে।
এই মুরগি খোলা ছেড়ে দিয়েও পালন করা যায়। যাদের বাসার আশেপাশে সবজি ক্ষেত বা ঘাস রয়েছে তারা চাইলে মুরগিকে ছেড়ে দিয়ে রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মুরগি অন্যান্য মাংশাসী প্রানী দ্বারা আঘাত না পায় এবং ঠিকভাবে খামারে ফিরে আসে।
ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে আমরা পরবর্তীতে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে। আমরা যে কোনো খামারই তৈরি করি না কেন খাবার সম্পর্কে আমাদের যথাযথ জ্ঞান থাকতে হবে।
মুরগির খামার করলে কি খাবার দেওয়া উচিত, গরুর ক্ষেত্রে কি খাবার দেওয়া উচিত, হাসের ক্ষেত্রে কি খাবার দেওয়া উচিত এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন একটা ধারনা থাকে না। যে কারনে খামারে থাকা প্রানীগুলো সঠিক পুষ্টি পায় না এবং তারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
ফাউমি মুরগি পালনের ক্ষেত্রেও এই দিকটি লক্ষনীয়। আমরা সোনালি মুরগিকে যে খাবার দিয়ে থাকি ফাউমি মুরগির ক্ষেত্রে ঠিক একই খাবার দিতে হয়। ফাউমি মুরগি যখন ছোট অবস্থায় থাকে তখন খাবার দিতে হয় স্টারটার।
এরপর একটু বড় হলে তাদের গ্রোয়ার খাদ্য দিতে হয়। এরপর মুরগির ডিম দেওয়া অবস্থায় চলে আসলে তখন দিতে হয় লেয়ার খাদ্য। এইসব খাবার দেওয়ার পাশাপাশি আমরা সবুজ শাকসবজি, ধান, ভুট্টা, চাল ইত্যাদি খাবার দিতে পারি।
এইসব খাবার খাওয়ালে মুরগি সুস্থ থাকে এবং সঠিক পুষ্টি পেয়ে থাকে। এখন চলুন জেনে নেই ফাউমি মুরগিকে কেমন খাবার দেওয়া উচিত তা সম্পর্কে।
- স্টারটার খাদ্যঃ ভুট্টা দেওয়া উচিত ৫০ কেজি, সয়াবিন মিল দিতে হবে ২৫ কেজি, প্রোটিন ১০ কেজি, রাইচ পলিশ ১০ কেজি, লাইমস্টোন ৩ কেজি, প্রিমিক্স ২০০ গ্রাম, সালমোনেলা ৩০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ৩০০ গ্রাম, মিথিওনিন ১০০ গ্রাম, টক্সিন বাইন্ডার ২০০ গ্রাম।
- গ্রোয়ার খাদ্যঃ ভুট্টা দিতে হবে ৫০ কেজি, সয়াবিন মিল ২৫ কেজি, প্রোটিন ১০ কেজি, রাইচ পলিশ ১০ কেজি, লাইমস্টোন ২ কেজি, প্রিমিক্স ২৫০ গ্রাম, সালমোনেলা ২৫০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ১৫০ গ্রাম, মিথিওনিন ১৫০ গ্রাম, টক্সিন বাইন্ডার ১৫০ গ্রাম।
- লেয়ার খাদ্যঃ ভুট্টা ৫৫ কেজি, সয়াবিন মিল ২১ কেজি, প্রোটিন ৫ কেজি, রাইচ পলিশ ৭ কেজি, লাইমস্টোন ১০ কেজি, প্রিমিক্স ৩০০ গ্রাম, সালমোনেলা ৩০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ১৫০ গ্রাম, মিথিওনিন ১৪০ গ্রাম, টক্সিন বাইন্ডার ১৫০ গ্রাম।
ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে আমরা একটু পরে জানবো। এখন চলুন জেনে নেই ফাউমি মুরগির ভ্যাক্সিন সম্পর্কে। মুরগির খামার দিলে একটি বিষয়ের দিকে সবথেকে বেশি নজর দেওয়া উচিত তা হলো মুরগি কোনো কারনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কি না তা সম্পর্কে।
যদি খামারের একটি মুরগিও হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সেই মুরগিকে আলাদা রাখা এবং অসুখ নির্ণয় করা। অসুখ সঠিকভাবে নির্ণয় করার পরে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা। মুরগি পালনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবথেকে বেশি সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায় তা হলো ফ্লু এবং ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগ।
আবওহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে মুরগির এই ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। যখন কোনো ভাইরাস বা ফ্লু জনিত অসুখ দেখা দিবে তখন দেরি না করে খামারের সব মুরগিকে ইনজেকশন বা এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিতে হবে। এখন চলুন জেনে নেই মুরগির কোন রোগের ক্ষেত্রে কি ভ্যাকসিন দিতে হয় তা সম্পর্কে।
- রানীক্ষেত বা ব্রংকাইটিস হলে আইবি এনডি ভ্যাক্সিন দিতে হবে। চোখে ফোটা ফোটা করে দিতে হবে।
- গামবোরা হলে আইবিডি দিতে হবে মুখে ফোটা ফোটা করে।
- রানীক্ষেত হলে ল্যাসোটা দিতে হবে চোখে ড্রপ এর মাধ্যমে।
- বার্ড ফ্লু হলে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা দিতে হবে ইনজেকশনের মাধ্যমে।
- ফাউল পক্স হলে এই নামেরই ভ্যাক্সিন দিতে হবে।
- করাইজা হলে জি এনডি এবং আইবি দিতে হবে।
ফাউমি মুরগি চেনার উপায়
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে আমরা পরবর্তীতে জানবো। এখন আমরা জানব ফাউমি মুরগি চেনার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে। আমরা যেই খামার দিবো সেখানে কোন ধরনের মুরগি থাকবে তা আমরা আগে থেকে ভেবে রাখি। পরবর্তীতে সেই মুরগি কিনে নিয়ে আসি এবং পালন করতে থাকি।
কিন্তু যখন বড় হয় তখন দেখা যায় আসলে আমরা যেই মুরগি পালন করতে চেয়েছিলাম এটি সেই মুরগি নয়। এর প্রধান কারন হলো মুরগির বাচ্চা ছোট থাকা অবস্থায় একই রকম হয়ে থাকে। তখন বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এটি কোন ধরনের মুরগির বাচ্চা।
তাই বাচ্চাগুলো যখন একটু বড় হয় তখন আমাদের মুরগিগুলো কিনা উচিত। কারন এক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা থাকে না। ফাউমি মুরগি চেনার ক্ষেত্রেও ঠিক এমন কয়েকটি চিহ্ন রয়েছে। যা দেখে আমরা চিনতে পারবো যে এটি ফাউমি মুরগি। এখন চলুন জেনে নেই ফাউমি মুরগি চেনার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে।
- এই মুরগির পা দেখতে কালো হয়।
- লোম সাদা হয়ে থাকে।
- চোখ বাদামি রঙের হয়।
- গলার নিচে সাদা হয়ে থাকে।
- পেট এবং পিঠের দিকে কালো রঙের হয়ে থাকে।
উপরোক্ত বিষয় বা বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে ফাউমি মুরগি চেনা যায়। আপনি যখন আপনার খামারের জন্য মুরগি কিনতে যাবেন তখন দেখে নিবেন উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের সাথে মুরগির মিল আছে কি না। মিল থাকলে আপনি অনায়াসে সেই মুরগি কিনতে পারেন।
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
সুষম খাবার এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মুরগি যখন বেড়ে ওঠে তখন মুরগি ডিম দিয়ে থাকে। মুরগি ডিম দেয় তার শরীরের সক্ষমতা এবং সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার দিলে ফাউমি মুরগি পালনের পর থেকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ডিম দিয়ে থাকে। আর নিয়মিত ডিম দেওয়া শুরু করে ৬-৭ মাস মাস পর থেকে।
ফাউমি মুরগির ডিম আকার এবং আকৃতিতে কিছুটা ছোট হয়ে থাকে। এই মুরগি এক বছরে প্রায় ২০০-৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। তবে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শারীরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে ডিম কমবেশি হতে পারে। বেশি পরিমানে ডিম পাবার জন্য মুরগিকে সঠিক খাদ্য দিতে হবে এবং নিয়মিত ঔষধ খাওয়াতে হবে।
ফাউমি মুরগির দাম কত
পূর্বে আমরা ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানব ফাউমি মুরগির দাম কত হয়ে থাকে তা সম্পর্কে। মুরগির দাম বা বাচ্চার দাম এর ক্ষেত্রে কমবেশি হয়ে থাকে। এর কারন হলো বড় হয়ে সেই মুরগির মাংস, ডিম এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রেখে মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
ফাউমি মুরগির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই। ফাউমি মুরগি হলো প্রধানত মিশরীয় জাতের এক ধরনের মুরগি। এটি মিশরের ফাইয়াম নামক প্রদেশ থেকে এসেছে। ফাউমি মুরগির একেকটি বাচ্চার দাম ধরা হয় ২০০ টাকার মত। তবে বাজারে এর থেকে কম বা বেশি হতে পারে। সেদিকে আপনার খেয়াল রেখে কিনতে হবে।
ফাউমি মুরগির বৈশিষ্ট্য
পূর্বে আমরা জেনেছি ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা সম্পর্কে। এখন আমরা জানব ফাউমি মুরগির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। ফাউমি মুরগি দেখতে অনেকটা ছোট অন্যান্য মুরগিদের তুলনায়। চোখ দেখতে কালো এবং লেজ উচু থাকে।
ফাউমি মুরগি প্রধানত ডিম দেওয়া মুরগির জাত হিসেবে ধরা হয়। ফাউমি মুরগি শুরু থেকেই বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। এই মুরগি পালনের ৩-৪ মাস পর থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে এবং বছরে প্রায় ২০০-৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এই মুরগির ওজন হয়ে থাকে দেড় কেজির মত প্রায়।
লেখকের মন্তব্য
আজকের পোস্ট থেকে আমরা ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়, ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি, ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা, ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা, ফাউমি মুরগি চেনার উপায়, ফাউমি মুরগির দাম কত, ফাউমি মুরগির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনের পোস্ট আপনাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করে থাকি। নিয়মিত পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।